বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বাগমারায় গোবিন্দপাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের ঈদ উপহার বিতরণ নতুন উচ্চতায় প্রবেশ করছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক : ড. ইউনূস গৌরীপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত উদ্দিপ্ত তরুন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ রূপগঞ্জের কাঞ্চনে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হলেন কফিল উদ্দিন সওজ অধিদপ্তরে মদ জুয়ার কাসিনো চালায় প্রকৌশলী জাহিদ উজ্জল স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান, আটক ৩ সাইবার নিরাপত্তায় MGST এজেন্সির ফাহিমের প্রশংসনীয় উদ্যোগ শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে কুড়িগ্রামে আটক-১ মানিব্যাগও ছিল না, এখন বিশাল শোডাউন কীভাবে- সারজিসকে তাসনিম জারার প্রশ্ন
মোদি ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের কাছে আনছেন কেন

মোদি ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের কাছে আনছেন কেন

ডেস্ক রিপোর্ট: ১৬তম ব্রিকস সম্মেলন মাথায় রেখেই বোধ হয় ভারত ও চীন হিমালয় সীমান্তের পশ্চিম সেক্টরে তাদের দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার স্থবিরতা থেকে সরে আসতে রাজি হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ভারতের বিরুদ্ধে চীনের প্রধান অভিযোগ এই যে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে শুরু করেছে। ভারত বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এসব চুক্তি কার্যকরভাবে ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সহযোগী এবং মিত্র হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এই নৈকট্যকে চীন ওয়াশিংটনের ‘চীনকে একঘরে করো’ নীতির সম্প্রসারণ হিসেবে দেখে। জবাবে চীন ভারতকে চাপে রাখতে চেয়েছে, যাতে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত রাখা যায়।

২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ) স্বাক্ষর করেছে। জবাবে চীন ভারতের ওপর চাপ বাড়ায়। ডোকলাম সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি হয়। এই সীমান্তে ভুটান, চীন ও ভারতের সীমানা মিলিত হয়।

উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টায় ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বেইজিং সফর করেন। তিনি চীনাদের আশ্বস্ত করেন যে ভারত এই সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ২৭-২৮ এপ্রিল চীনের উহানে মোদি ও চীনা রাষ্ট্রপতি সি চিন পিংয়ের মধ্যে প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেখানে দুই নেতা তাঁদের মতপার্থক্য দূর করতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

তবে মোদির দেওয়া আশ্বাস সত্ত্বেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি মৌলিক চুক্তি স্বাক্ষর করে সেই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর। বিষয় ছিল যোগাযোগ ও তথ্যসুরক্ষা।

তামিলনাড়ুর মহাবালিপুরমে মোদি এবং সির মধ্যে দ্বিতীয় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে শীর্ষ সম্মেলনটিকে ব্যর্থ বলা যায়। বৈঠক হয় ২০১৯ সালের ১১-১২ অক্টোবর। এর মধ্যে মোদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও চুক্তি সম্পাদনের কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এ জন্যই বোধ হয় সম্মেলন ফলপ্রসূ হয়নি।

মহাবালিপুরম সম্মেলনের পর নেপালের কাঠমান্ডুতে একটি সরকারি সফরে সি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে ‘কেউ যদি চীনকে বিভক্ত করার চেষ্টা করে তাহলে পরিণতিতে তার হাড়-মাংস চূর্ণবিচূর্ণ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হবে’।

এরপর ২০২০–এর জুনে গালওয়ানে চীন-ভারত সৈনিকদের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষ হয়। উহান সম্মেলনে সিকে দেওয়া মোদির আশ্বাস সত্ত্বেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে থাকে। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার চতুর্থ মৌলিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মোদি আত্মবিশ্বাসী

ছিলেন যে ভারতের জন্য মার্কিন বাজারে তিনি অগ্রাধিকারমূলক অভিগমন নিশ্চিত করতে পারবেন। মার্কিন সফরের সময় মোদি এমনকি ট্রাম্পের পক্ষে সরাসরি প্রচারণা চালান।

কিন্তু এত কিছুর পর ভারতে মার্কিন বিনিয়োগ ন্যূনতমই রয়ে গেছে। পরিবর্তে চীনের ওপর ভারতের বাণিজ্যনির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে এসে মোদি এস জয়শঙ্করকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেন। আশা করেছিলেন যে তাঁর আমেরিকাপন্থী অবস্থান মার্কিন বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিকে আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আমেরিকান বাজারে ভারতীয় পণ্যগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবর্তে, ফোর্ড, জেনারেল মোটরস এবং হার্লে-ডেভিডসনের মতো বড় আমেরিকান কোম্পানিগুলো এ সময়ের মধ্যে ভারতীয় বাজার থেকে বেরিয়ে যায়। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সুবিধা প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছায়নি।

ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত উল্লেখযোগ্যভাবে পিছু হটেছে। ভারত দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে তার ঐতিহ্যবাহীভাবেই নিজের প্রভাবাধীন হিসেবে দেখত। কিন্তু আমেরিকান মিত্র হওয়ার পর, ভারতের কোনো প্রতিবেশী দেশ তার বলয়ের মধ্যে থাকেনি। বরং ভারত আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের অধীন মিত্র হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবেশী দেশগুলোয় ভারতবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপে ভারতপন্থী সরকার অপসারণে গোপনে সাহায্য করার অভিযোগও এনেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

এসব মিলিয়ে ভারত বুঝতে পেরেছে যে যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে ভারত ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ করবে। মোদ্দাকথায় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নিজস্ব প্রভাবের বলয় ওয়াশিংটনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

হেনরি কিসিঞ্জার একবার বলেছিলেন, ‘আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, কিন্তু আমেরিকার বন্ধু হওয়া ভয়াবহ।’ কথাগুলো ভারতের জন্য পুরোপুরি মানানসই বলে মনে হচ্ছে।

এদিকে চীনা পণ্যের ওপর ভারত মুখে মুখে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথা বললেও চীনের সঙ্গে তার বাণিজ্য বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাড়তি যে বাণিজ্য তা মূলত চীন থেকে করা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য চীনের প্রয়োজন থাকলেও চীনের ভারতের ওপর এমন কোনো নির্ভরতা নেই।

শেষ পর্যন্ত চার বছর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মোদি সরকার বুঝতে পেরেছে যে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের সহযোগিতা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এও বলেছিলেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা যেহেতু বাড়ছে, চীন সম্ভবত ভারতের সীমান্ত ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com